কামরুল হাসান রুবেল, নোয়াখালীঃ
ছোট ফেনী নদীর অব্যাহত ভাঙনে সোনাগাজী ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার হাজারো মানুষ এখন দিশেহারা। ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম, ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ পাকা সড়ক পথ। ফলে, মানচিত্রে ছোট হয়ে আসছে দু’টি উপজেলা। মুছাপুর রেগুলেটর পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।
গত আগস্টে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশের বাঁধ কেটে দেয়ায় সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় ছোট ফেনী নদীর ওপরে নির্মিত মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যায়। ওই ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে উপদেষ্টা স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় জনগণকে আশ্বস্ত করলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ এখনো স্পষ্ট না হওয়ায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব গ্রামবাসী।
ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের ও গাছের খুঁটি এবং বড় বড় বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ নির্মাণ করলেও খরস্রোতা জোয়ারের পানিতে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। চলতি মৌসুমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভেঙে যাওয়া মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণ করে পানি আটকারো না গেলে সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জের দুই উপজেলার হাজার হাজার একর ফসলি জমিসহ কৃষিনির্ভর জনপদ, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির অচিরেই হারিয়ে যাবে। সঙ্কুচিত হয়ে আসবে উপজেলার মানচিত্র।
সরজমিন দেখা যায়, সোনাগাজীর আউরারখিল, চরবতপুর, কুঠিরহাট কাটাখিলা, কালি মন্দির, আদর্শগ্রাম, কাজীর হাট সøুইচগেট, জেলেপাড়া, আলমপুর, তেল্লারঘাট, ইতালি মার্কেট, ধনীপাড়া, সাহেবের ঘাট ও নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নদী উপকূলীয় গ্রামগুলোর মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। সন্ধ্যার সময় রান্নাঘরে ভাত রান্না করছিলেন গৃহবধূ কৃষ্ণা রানী। উঠান থেকে বারবার ডাকছিল তার শিশু সন্তান। কৃষ্ণা রানীর ভাত রান্না করা অবস্থায় ঘরের মাটি সরে যাচ্ছিল নদীতে। এ অবস্থায় কৃষ্ণা রানী দ্রুত রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে দৌড়ে বের হয়ে নিজের শিশু সন্তানকে নিয়ে প্রাণে বাঁচলেন।
কৃষ্ণা রানী জানান, ২০১৪ সালে সোনাগাজী উপজেলাসংলগ্ন মুছাপুর ক্লোজার ড্যাম নির্মাণ করা হলে নদীভাঙন সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি বন্যায় মুসাপুর ক্লোজার ভেঙে গেলে ফের ভাঙন শুরু হয়। নদীভাঙনে আমাদের বসতঘরসহ জেলেপাড়ার আরো একাধিক পরিবারের বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে। নতুন করে বসত ভিটে তৈরি করার মতো আমাদের আর কোনো জায়গা জমি নেই।
জোয়ারের পানির তোড়ে ছোট ফেনী নদীর কাজিরহাট থেকে বাংলাবাজার পাকা সড়কের প্রায় ৫০০ মিটার নদীতে চলে গেছে। ফলে বাজারের উত্তরাংশের মানুষরা একমাত্র রাস্তাটি হারিয়ে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপজেলার কৃষিনির্ভর ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, সাম্প্রতি ভারতের পাহাড়ি ঢলে ভেঙে যাওয়া মুছাপুর রেগুলেটর দ্রুত নির্মাণ করা না হলে ছোট ফেনীর ভাঙন থেকে এ জনপদকে রক্ষা করা যাবে না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় ভাঙন কবলিত এলাকায় সাময়িক জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙনরোধে দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থার বিষয়টি নিয়ে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
ঢাকা অফিস
সিটিহার্ট বিল্ডিং, সুইফটঃ ১৩/১, ৬৭ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল : 0১৬৭৩৭২৮৮৬৫
ই-মেইল : sangbadprothom@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক প্রথম সংবাদ. All rights reserved.